আমরা কুষ্টিয়ার মানুষ। আমাদের যখন
বাইরের কোন মানুষ বলে, "তোমাদের
কুষ্টিয়ায় যাবো ভাবছি। তা.. দেখার
কি কি আছে?
... আমরা অনেকেই নির্ভেজাল
হাসি দিয়ে নিশ্চিন্ত মনে বলে দিই,
"আরে আসেন ভাই,
★★লালন শাহের মাজার আছে, রবি
ঠাকুরের কুঠিবাড়ি আছে, মীর মশাররফ
হোসেনের বাস্তুভিটা আছে... এম..
এম্ম...
ইয়ে... মানে" ... জিহ্বায় গিট্টু?
.
লালন শাহের মাজার আর রবী ঠাকুরের
কুঠিবাড়ি তো আছেই।
ওগুলো তো কমন। কিন্তু আরও
আছে.
★★..দেশের সবচেয়ে কম দরিদ্র
মানুষের বাস এই কুষ্টিয়া।
অনেকক কিছু আছে। মানুষ দূর থেকে
কুষ্টিয়ায় আসতে চাবে, মন ঠান্ডা
করার মত কিছু দেখতে...
সেই স্থানে কিছু সময়কাটাতে...
নতুন কিছু জানতে আর সেসবের
সাথে নিজের ছবি তুলতে!
★★এই জেলাতেই রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ
তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
★এ জেলায় ঢোকার শুরুতেই রয়েছে
দেশের একমাত্র
পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রূপপুর
পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
★রয়েছে দেশের একমাত্র লৌহ নির্মিত সেতু হার্ডিঞ্জ ব্রীজ।
★দেশের ২য় বৃহৎম সেতু লালনশাহ সেতু।
★মোহিনী মিলের নাম তো জানা আছে;
সেই
মিলের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকাকে
মিলপাড়া
বলা হয়। সেটাই পুরো উপমহাদেশের
মধ্যে
নামকরা টেক্সটাইল মিল; ১০০ একরের
বিশাল জায়গার উপরে। কোন একটা
সময়,
এই মিলের তৈরী কাপড়ই পুরো
উপমহাদেশের
বস্ত্রের যোগান দিত। অসাধারণ একটা
ঐতিহাসিক জায়গা
★নাসির গ্রুপ, বাংলাদেশ মেলামাইন,
জাম্প কেডস, নাসির গ্লাস।
.
★বিআরবি কেবলস লিমিটেডের নাম
তো সবারই জানা।
কমবেশি বাংলাদেশের অনেক
প্রান্তের মানুষই, এই কোম্পানির
প্রোডাক্ট ব্যবহার করেন।তৈরি হচ্ছে
অপটিকাল ফাইবার,
আর সাগরের নিচ দিয়ে এই ফাইবার দিয়ে
সারা দেশের ইন্টারনেট সংযোগ চালু রাখা হয়েছে।
এই বিআরবি ও
কিন্তু সম্পূর্ণই কুষ্টিয়ান... যার পণ্য সারা
দেশের মানুষের পাশাপাশি বিদেশীরাও সমানে
ব্যবহার করছেন।
আরও রয়েছে
★কিয়াম মেটালস এর কারখানা।
.
★ক্লাস নাইন-টেনের কৃষিশিক্ষা বইতে
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সেচপ্রকল্প
জিকে
প্রোজেক্টের কথা বলা আছে। প্রায়
১,৪০,০০০ একর জায়গা নিয়ে বিস্তৃত এই
প্রোজেক্ট। মজার ব্যাপার হলো,
কুষ্টিয়াতে
আমরা জিকে ঘাট চিনি, জিকে কলনি
চিনি।
কিন্তু এই 'জিকে'র ঘটনা জানিনা
অনেকেই।
আর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই সেচ
প্রকল্পের দায়িত্ব রেউনউইক যজ্ঞেশ্বর
কোম্পানির উপর।
★★কুষ্টিয়ার চাল শুধু দেশ নয়
বিদেশেও রপ্তানি হয়।
রশিদ, বিশ্বাসের চাল তো সবাই চেনেন।
দেশের সিংহভাগ চাল এখান থেকেই আসে ।
.
★মঙ্গলবাড়িয়া বাঁধে গেলেই ঢের
বোঝা যায়,
গড়াই নদীর নীলাভ বর্ণের পানিটা
কয়েকতলা উপর থেকে দেখতে কেমন
লাগে।
গড়াই নদী ধরে, পদ্মা-গড়াই মোহনাতে
গেলেই বোঝা যাবে কক্সবাজার সমুদ্র
সৈকতটা কেমন সাইবার বিলে গেলেই
বোঝা
যাবে, চিকন সরু রাস্তা বেয়ে
কিভাবে
গ্রীষ্মের খরতাপেও প্রাকৃতিক শীতল
জায়গায় বসে থেকে শহুরে গ্রামীণ
শোভা
নেয়া যায়।
* পৌরসভার বিজয় উল্লাস
চত্ত্বরে বসলেই ঢাকা টিএসসির রাজু
ভাস্কর্য্যের নিচেই বেশি মনোরম
নাকি
বিজয় উল্লাস চত্ত্বর।
.
সন্ধ্যের পর মোল্লাতেঘোরিয়া
ব্রিজের
রেলিং-এ পা ঝুলিয়ে বসে
ফিরফিরে ঠান্ডা
বাতাসেই এক কাপ চা খেলেই বোঝা
যায়,
গ্রামীণ ব্যস্ততার কোলাহলও কতটা
মিষ্টি
হতে পারে। বিকেলে সূর্যাস্তের সময়
রেউনউইক বাঁধের বাম কিনারে
গেলেই
আন্দাজ করা যায় কুয়াকাটায় আসলে
কিভাবে
সূর্যটা ঢলে পড়ে দৈনিক মৃত্যুর কোলে।
একটু
রাত গড়ানোর সময় সরকারী কলেজ
মাঠের
আড্ডাটা কেমন জীবন্ত হতে পারে।
★★ আর মণিষীদের কথা, হুমম,
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত
এই কুষ্টিয়া শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে
বাংলাদেশকে করেছে সমৃদ্ধ।
এছাড়াও
★★★বিষাদ সিন্ধুর রচয়িতা মীর মশার্রফ হোসেন
★★বাউল সম্রাট লালনের তীর্থভূমি
★পুরাতন কুষ্টিয়া হাটশ হরিপুর গ্রামে গীতিকার,
★সুরকার ও কবি আজিজুর রহমানের বাস্ত্তভিটা ও কবর,
★এ জনপদে জন্মগ্রহণকারী বিশিষ্ট কবি দাদ আলী,
★লেখিকা মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা,
★ ‘‘এই পদ্মা এই মেঘনা’’ গানের রচয়িতা আবু জাফর,
★ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান
★★কুষ্টিয়ার সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠাতা
এবং বাংলার প্রথম সংবাদপত্রের প্রতিষ্ঠাতা
কাঙাল হরিণাথ মজুমদার
★★নীল বিদ্রোহের নেত্রী প্যারী সুন্দরী
★ স্বদেশী আন্দোলনের নেতা বাঘা যতিন,
★প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী,
★সঙ্গীত শিল্পী মোঃ আব্দুল জব্বার,
★★ফরিদা পারভীনসহ, এস আই টুটুল,
ক্রিকেটার এনামুল হক বিজয়,হাবিবুল বাশার সুমন সহ
অসংখ্য গুণীজনের তীর্থস্থান কুষ্টিয়াকে সমৃদ্ধ করেছে।
বিখ্যাত প্যারা সন্দেশ,আর কুলফি।
★কুষ্টিয়া শুধুমাত্র দুই-তিনটা
ঐতিহাসিক
জায়গাতেই সীমাবদ্ধ না। আধা-
বিশাল একটা
জায়গায় সবকিছু দিয়ে মোড়া
নির্ভেজাল
একটা মিষ্টি শহর যেখানে আপনি
নরমালি
কোন জ্যাম পাবেন না। আবার হুটহাট
জ্যামের মুখ দেখলেই মনে পড়বে,
"ইহাকেই
জ্যাম বলে"
.
এখানে ধুমধাম রাস্তায় পেয়ে যাবেন
সুইট-
কিউট দুজন রিক্সাচালকের ঝগড়া...
আবার
দেখবেন কিছুক্ষণ পর, তারা একসাথেই
চা
খাচ্ছে। এই সুইট-কিউট শহরে... আপনাকে
'স্বাগত' জানানোর জন্য প্রচুর মানুষ
পাবেন অনায়াসেই, যারা বেশ মিশুক
স্বভাবের। সবচেয়ে কিউট ফ্যাক্ট
হলো...
কোর্ট স্টেশনের উপর দিয়ে যে ট্রেন
পোড়াদহ জংশনে যায়, ঘন্টাখানেকের
পার্থক্যে সেই ট্রেনই আপনাকে কোর্ট
স্টেশনে পৌছে দেবে; মধ্যে থেকে
পোড়াদহের
হাম্বার দুধ'চা আর গরম সিঙ্গারা।
পথিমধ্যে, ইঞ্জিনের দায়িত্বে থাকা
মামার
দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে
দেবেন... পাঁচ
টাকা ভাড়াও মাফ ।
এরপর আসেন কুমারখালিতে,
আপনি প্রথমেই সাক্ষী হবেন
বাউল সম্রাট লালন শাহ্ এর
মাজারের অভূতপূর্ণ পরিবেশের ।
এরপর আপনি দেখতে পাবেন
বাংলাদেশের প্রথম মুসলিম সাহিত্যিক
মীর মশার্রফ হোসেন এর বাস্তভিটা
এবং স্মৃতি বিজারিত সংগ্রহশালা ।
এরপাশে আপনি পাবেন
মীর মশার্রফ হোসেন সেতু ।
এখানে আপনি চোখের পলকে ঘন্টার
পর ঘন্টা সময় কাটিয়ে দিতে পারবেন ।
এবার আপনি যদি শিলাইদহে আসেন
তাহলে সেখানে আপনি দেখতে পাবেন প্রথম বাংলার
প্রথম নোবেল বিজয়ী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি ।
আপনি ট্রেন থেকে নেমেই
কুমারখালীর ঐতিহ্যবাহী
রমেশ দধি ভান্ডার এর
মিষ্টির স্বাদ পাবে
0 মন্তব্যসমূহ